জলেশ্বরী / কচি রেজা
১
বহুদিন তাকে মানে তোমাকে দেখিনা, আজ যখন আকাশ ব্যেপে ঘন মেঘ ঠিক চারটের ভোরের বাতাসে একটু কি শীত ?যে বেদনা আমাকে আটকে দিয়েছে,তার উৎসমুখ নেই, বিস্ফার নেই জিভের স্বাদ সেও নেই অনেকদিন জানি, কাছে যেতে হবে, তার কাছে, তোমার কাছে , তার চঞ্চলতায়, তোমার পাখি পাখি চোখে, তখন আবার আমার রক্ত কণিকার ভ্রমণ, আবার আমার শরীরের অজস্র ডানা !
২
একদিনও আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারিনা একটি বেলাও তবু এই শীতে পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে যেতে পারিনা, কোনও শীতকালেই আমি যাবনা তোমার কাছে, কবে যেন অভিভূত হাসিতে ঘাস আর রোদের মত ছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজে কিরকম জ্বর হত তোমাকে বলতাম, এখন আমার ঠোঁটে বিড়ম্বিত বালুকণা,প্রহর ঠিক রাখতে বর্ণনা করি বৃত্তান্ত ,মানুষ যা দিতে পারেনা তেমনি একটি মরণ দেবে আমাকে ?এখন একফালি জীবনে যদি স্থির করতে চাই সম্পর্ক অন্ততঃ একটি রাত কেউ কি ঘুমের জন্য খুলে দেবে বুকের পাঁজর !
৩
রুগ্ন পাতা ভালোবাসি বলে আর আমার সতেজ বৃক্ষ হওয়া হলনা
পাতার পরিচয়ে দিন যায় তবু রক্ত মুচড়ে ওঠে যদি, তোমরা আমার
ঘরেই খুঁজে পাও ঘুণ, সেদিন গ্লাসের সঙ্গে কাটাই সমস্ত সন্ধ্যা
আর মাখনের মত গলে যেতে দেখি অন্যমনস্কতা, তুমি কিভাবে
যেন একটি অসাম্প্রদায়িক নাক ফুল কিনে পরিয়ে দাও, নিঃসহায়ের
মত উচ্চারণ করো পাখিমন্ত্র, পাখিমন্ত্রে চাপা পড়ে যায় পিপাসা
তবু আমি পাখি খাইনা, দেখেছি কমলা লেবুর সঙ্গে থেকেজীবনের
স্বাদ, পাতা ভালো হয়ে গেলে আবার কি আমি খুঁজে নেব অন্য রুগ্নতা?
৪
তোমাকে ভুলতে গিয়ে দেখি, অজস্র কয়লা গুঁড়ো এসে লাগছে চোখে,
খুব আগ্রহ নিয়ে শাদা হাত বাড়িয়ে তাই ছিঁড়ে ফেলতে চাই অটোগ্রাফ, তোমাকে ভুলতে চেয়ে একটি জেটির কামরায় জ্বলে ওঠে বাতি, যাবজ্জীবন আটকে যায় শাল পাতার নিঃশ্বাস, তুমি কিন্তু বিচলিত হও আর বিচলিত হওয়ার কারণ না জেনেই আমি পাতা কুড়াতে যাই দেখি শাল পাতার অভিভূত ব্যথা, যে বোষ্টুমির গান শুনে তুমি মুদ্রা গুনেছিলে তাকে মনে রাখতে কেনো এত শক্তি লাগে কেনো এত পিপাসা, লালনের আখড়ায় আর কত শতাব্দী তুমি সুলক্ষণযুক্ত গাছ হয়ে থাকতে চাও? গাছের নিদ্রা ভেঙ্গে বের হয়ে আসে সোমত্ত আগুন, আগুনের পক্ষে কি এমন গোছালো
হওয়া সম্ভব?
৫
আজ হরিণের কাছে যাব, ভিতরের হরিণী তাই আলমিরা খুলে খুঁজছে তার সতরো বছর বয়স,কোথায় যে লুকানো একুশ ইঞ্চির কোমর, ঢিলে হাতার ব্লাউস, অন্তসারশূন্যতা শিখতে আজ আর পাহাড়ের গুহায় যেতে হয়না, তুমি এসে দাঁড়ালে স্বস্তি নষ্ট হয় বয়েসের গায়ে হাত বুলাই, চুলে গভীর হয় মেহেদি, কবে যেন পরতাম দুঃসাহসী শাড়ি,সতরো বছর বয়েসের ধুলোবালি হাতড়ে পাওয়া যায় এখনও, কিন্তু খালি পেটে শহরের অলি গলি আর
প্রান্ত গিলে খাওয়া সেইদিনের সেই বেখেয়ালি রক্ত, এখন নখের কাছে এসে বিষন্ন হয়ে যায় নাভি!