গোলাপি টেপ পরে বাথরুমে গিয়েছিলো দিনের প্রথম প্রহরে, বেরিয়েছিলো একঘণ্টা পর। কতো কাজ— কতোকিছু সেরে নিতে হলো: শ্যাম্পু-সাবান-প্যাড ঠিকমতো বসানো— তারপর চুলে টাওয়েল পেঁচিয়ে, চিপে, পানি বের করে বেরিয়ে আসা। তিনটে পিরিয়ড নিতে হয়। অল্পবয়সে পাশ করে কলেজের চাকরিটা যখন পেলো, অনেকেই অবাক হয়েছিলো, মাত্র চব্বিশে, দেখলে আরও কম মনে হয়, সে কি-না লেকচারার! ছাত্র ছাত্রীরা মানে। প্রাণবন্ত ঘরে গাম্ভীর্যের চুন-সুরকি কখনও কখনও লাগাতে হয়। ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে আলোচনা দীর্ঘক্ষণ; বেশ গভীর। বিকেলে বাড়িতে ফিরে কাটলেট, কফি; এলোমেলো হওয়া। রাতের সুতোয় ঝুলে থাকে মহা অন্ধকার; সন্ধ্যায়, একটানা বেশ কিছুক্ষণ, বেলকনির গাছগুলো (ফুলের) খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে লক্ষ করে সময়ের ভারগুলো শিথিল করা। অবয়বটুকু ব্যক্তিমানস-মননে আচ্ছন্ন অদ্ভুত ঘোর আনে। লাবণ্য এগুলো মেনে নেয়; মা ডাকেন, ‘লাবণ্য আয়, অনেক কথা তোর সাথে।’ ‘আসি মা।’ কথা শেষে বই খুলে বসা; খেয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়ে, মনে থাকে না, ঘুম আসে দেরিতে। মায়ের শৈশব আর লাবণ্যের শৈশবের ভেতর তফাৎ। মায়ের শৈশব খোঁজা নিবিড়-নৈকট্যে, ঝাপসা হলেও অন্তর্গত আঁচড়গুলো লাবণ্য’র কাছে প্রকটিত। কখনও টবের রঙ্গনের ওপর সবুজ ফড়িং ওড়ে, ঘুরপাক খায়। মায়ের ঘরের দিকে গতিমুখ। ‘ওই যে ফড়িংটা উড়ে গেলো, মা, অনন্তকালের ভেতর মুহূর্তটা ফিরবে না;’ ফিরবে না অমিত রয়, কেতকী, শোভনলাল; শুধু লাবণ্য একা—মৃত্তিকালগ্ন। সবুজ শ্যাওলার বিস্তৃতিতে যে হ্রদ অপূর্ণ, লাবণ্য সে হ্রদের কাছে বসে পাথরখণ্ডের ওপরে। কই অমিত?
আজ লাবণ্যের হাত ধরতে চাইলে লাবণ্য না করবে না। পৌষের এই অন্ধকার, আলোর প্রতিরূপ নাকি নগ্নতা, কিম্বা ছায়া, যাই হোক এই অন্ধকার এই হাওয়া, লোমকূপের গোড়ায় যাবতীয় অনিবার্যতার চিহ্ন; হাওয়ায় ঠাণ্ডা লুকিয়ে রাখে। লাবণ্য ভাবে, ব্যালকনির যে গাছটি লাবণ্যের মুখ করে এগিয়েছে—পৌষের এই হাওয়া তাকে কী দেবে? বহুদূর দিগন্ত হারিয়ে গিয়ে নির্জনতা ভেঙে অবিরাম শোরগোল! আকাশের দিকে নক্ষত্র দেখে যেন মেলাতে চায় গণিতের আদি শূন্যতা, যার শুরু আর শেষ নেই, শূন্যের অবয়ব তো বৃত্ত, লাবণ্য কোন বৃত্তে? নক্ষত্রমুখ আলোকে বাঁচিয়ে রাখে, না অন্ধকারকে জাগিয়ে তোলে আলো। অমিতের কথার প্রত্যুত্তরে সিসি বলেছিলো, ব্যাঙটা এখন টুপ করে জলের ভেতর লাফ দিলো, অনন্তকালের ভেতর এ-মুহূর্তটাও ফিরবে না। সত্য। লাবণ্য জানে: সত্য হলো তাই যার একাধিক অবয়ব নিজ-নিজ পরিধির ভেতর; পরিধি পাল্টালে আরেকটা সত্য; সেটা সরে গেলে আরেকটা সত্য। সত্যগুলো হাতের পাঁচটা আঙুলের মতো—যার-যার বলয়ে অস্তিত্ব, আর কব্জিটা উপলব্ধির ক্ষেত্র, এক সংজ্ঞাহীনতার বোধে ভাসে। রাত ঘিরে নামে ঘন অন্ধকার, নামে রহস্যের কুহেলিকায়। লাবণ্য বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে। মা জানে লাবণ্য ফিরোজা আর সবুজের মধ্যবর্তী রঙের সালোয়ার-কামিজ পরলে বৃষ্টি হয়। লাবণ্য ভাবে বারবার বিষয়টা কাকতালীয়— না, কোথায় যেন কী একটা হচ্ছে। কোনো-কোনো দিন লাবণ্য দেখেছে, জামাটা গায়ে দিয়েছে পাজামাটা পরে নি— অর্ধেকবেলা বৃষ্টি। কাগজি লেবুর গাছে ঝাঁঝালো গন্ধ! মানুষের অহমের বিপরীতে দাঁড়াতে পারে। উত্তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারে যাবতীয় সক্ষমতা। লাবণ্য সম্মোহিত হয়। বালিশটা বুকের নিচে নিয়ে পাদুটো ঢেঁকির মতো উপরদিকে উঠিয়ে আবার নামায়। আজ কলেজ থেকে ফেরার পথে ডিরোজিও’র এবং মধুসূদন ও হেনরিয়েটার সমাধিস্থলে গিয়েছিলো। কারা যেন গুঞ্জন করে বলে যাচ্ছিলো, ‘ঠাকুর থাকবে কতোক্ষণ, ঠাকুর হবে বিসর্জন।’ লাবণ্য ভাবে, ভাবার কী-বা আছে—শুধু কল্পনা আর কম্পনটুকু। কল্পনা স্বপ্নমালার সারাৎসার। কেতকী ফোন করেছিলো, উত্তর লাবণ্যের: ‘মাগীবাজি করতে আসবে? আজ আমি ব্যস্ত।’— য়্যুরোপ কী শেখালো? কথিত নারীবাদ কতোটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ! বার্গম্যানের ছবিটা ভুলতে চাচ্ছিলো লাবণ্য। টোটাল বিষয়টা বারবার একই: পা থেকে শুরু করে, মেয়েটা মেয়েটার সাথে, আস্তে-আস্তে মাথা পর্যন্ত এগোয়, পেনিট্রেশন বাদেই সিক্রেশান— ‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করবো কি? তিন মাসের এক কন্যা ছিলো/নয় মাসে তার গর্ভ হলো/এগারো মাসে তিনটে সন্তান কোনটা করবে ফকিরি।’ মা গেয়ে ওঠে। একসময় ভালো গাইতো। আজ গুনগুন করে। মনফকিরা/সহজিয়ারা বলে: মূলবস্তু রজঃবীজ নিরাকার ও নীরাকার, স্বর্ণাকারের মতোই দেহ গলিয়ে, গর্ভে ছাঁচে ফেলে দেহ গঠন করে। রূপান্তরের কী গুহ্য জ্ঞান, অবাক করে।
লাবণ্য হওয়ার আগে বিয়ের দু’বছর আগে মা পুতুল বিয়ে দিয়েছিলো চাচাতো বোনের পুতুলের সাথে। খাসি জবাই হয়েছিলো, মিনিট পনেরোর পায়ে হাঁটা পথে গাড়িতে করে বরযাত্রীরা গিয়েছিলো; পোলাও, খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট বানানো। পুরুষ-পুতুল তেমন হতো না বলে মেয়ে-পুতুলের চুল কেটে গোঁফ লাগিয়ে ট্রাউজার আর শার্ট পরিয়েছিলো। মায়ের পুতুল মেয়ে পক্ষ। বিয়ের দিন মা কেঁদেছিলো। লাবণ্যের বিয়ের দিন মা কাঁদবে! যে-সময় লাবণ্য ঘন রাতের ভেতর ঢুকছিলো অমিত তখন বার-এ জিনে বরফ নিয়ে। আফটার ড্রিংকস অমিত যেটা করে—রবিঠাকুরের কবিতা একের পর এক মুখস্থ বলে। সেল-এ লাবণ্যকে চাই। সম্পর্কটা বুঝতে পারে না। কথার সময় কণ্ঠটা আর্দ্র হয়, নৈসর্গিক এক ব্যাখ্যাতীত অনুস্বর। লাবণ্য বলে, ভালোবাসি, অমিত বলে, আমিও। অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট অমিত কিটসের ‘টু ফ্যান্সি’ কবিতা থেকে কয়েক লাইন আওড়ায়:
Ever let the fancy roam
Pleasure never is at home
At a touch sweet pleasure melteth
Like to bubbles when rain pelteth
তারপর স্বগতোক্তি: ‘নো আর্থলি ওমেন ক্যান এভার স্যাটিসফাই, হাউএভার ফেয়ার শি ইজ।’ পরিপার্শ্ব থেকে আকাশে তারাবাজি ছোড়া শুরু হলে মা বলে, ‘লাবণ্য, বৃষ্টির সময় যখন শিল কুড়াস ভালো লাগে, আবার ভয় পাই ঠাণ্ডা লাগে যদি।’ মায়ের শৈশব ঋদ্ধ! মায়ের সময় গুণে গুণে স্কিপিং করে কতোক্ষণ কে দম রাখতে পারে খেলাটা চলতো। প্রায় উঠে গেছে। কোলের বালিশ সুরের সঙ্গে অন্যকে ছুঁড়ে দেয়া, এখনো খেলাটা চলে? লাবণ্য জানে, যতোই ধ্রুপদী হোক না কেন, পরিকল্পনাহীন কোনো সাবলীলতা কোনোক্ষেত্রেই আজ প্রয়োজন নেই। তাদের সময় বুদ্ধির, বিবেচনার বিষয়টিও বুদ্ধির কাছে গৌণ। বাইরে তাকায়—ডাকে অনেক রাতপাখি। চাঁদের আভাস। আকাশ জুড়ে ধবধবে মেঘ। দূর কোনো জলাশয়ে পানির ঢেউয়ের শব্দ। লাবণ্য কাঁদে। কাঁদে আর কাঁদে। ডুকরে ডুকরে কাঁদে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। ঠোঁটমুখ ফুলিয়ে কাঁদে। অন্ধকার আলোকে গ্রাস করে। লাবণ্য ডুব দেয়। অন্তর্গত কপাটে কে যেন নক্ করে। কে ওখানে? ওখানে কে? লাবণ্য বলে, কে তুমি বলো? মা একদিন বলেছিলো, ‘একা থাকতে নেই লাবণ্য’, লাবণ্য বলেছিলো, ‘আকাশ আমার বন্ধু, পৃথিবীর যে প্রান্তে যাই না কেন তাকে দেখবো। বিশ্বাস করো, আকাশ দশ সেকেন্ডের জন্যে নেমে চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। এই তো আমি।’ কতো রঙ, জোড়া রামধনু, নীল, শাদা, আকাশি, হলুদ, কালো, ধূসর ছাড়া আরও কতো! ‘হাতে রঙ আছে বলেই ইচ্ছে মতো দেবো?’ ‘দেবো— ক্ষতি কী? প্রশস্ত প্রেক্ষিতে রঙ টলতে টলতে গিয়ে মাতাল সৌন্দর্যে! তা কি জানো?’ অমিত জানে। ক্রোচের অভ বিউটি পড়া। মূলে আছে অস্তিত্ব। শোভনলাল এতো লাজুক? অমিত জানে, কৈশোরে সাইকেল নিয়ে শোভনলাল বেড়াতে বেরিয়েছিলো, কয়েকটা ছেলের সঙ্গে গণ্ডগোল হয়, শোভনলালের বড়ো ভাই সুলভলাল পথ দিয়ে যাচ্ছিলো, পরিস্থিতি এমন দেখে গাম্ভীর্যে সেখানে গিয়ে সাইকেলটা নিয়ে বাড়ি আসেন; শোভনলাল বুঝলো জগৎ মেটরিয়াল, সে নার্ভাস হয়ে গেলো। এমন হতে পারে, বিপদ নিজে ফেস করে বেরিয়ে আসুক এ-রকম চাওয়া সুলভলালের থাকতে পারে। লাবণ্যের ভালোবাসা পেলে দুঃখ পুষিয়ে যাবার কথা। দুটো জিনের অর্ডার! গার্ডেনের ওপরে খোলা আকাশ। নক্ষত্ররাজি। অমিত স্মৃতি থেকে ভাবলো, ওই যে নক্ষত্রটা যদি মৃগশিরা হয়— বিষুব মৃগশিরা নক্ষত্র নয়শো পঞ্চান্ন বছর ছয় মাস কুড়ি দিনে অতিক্রম করে রোহিণী নক্ষত্রে উপনীত হয়েছিলো। মৃগশিরা ও রোহিণী নক্ষত্র অতিক্রম করে কৃত্তিকা নক্ষত্রের প্রথম অংশে উপস্থিত হতে বিষুবের এক হাজার নয়শো এগারো বছর এক মাস দশ দিন অতীত হয়েছিলো। তারপর কৃত্তিকা, ভরনী, অশ্বিনী, রেবতী ও উত্তরভাদ্রপথ নক্ষত্রের অর্ধাংশ পর্যন্ত গিয়ে বিষুব দক্ষিণাবর্তে চলে আসে। অমিত আপন মনে বলে, ‘মিত্র আমাদের শান্তি দিন, বরুণ আমাদের শান্তি দিন, অর্যমা আমাদের শান্তিদায়ী হোন, ইন্দ্র ও বৃহস্পতি আমাদের শান্তি দিন, বিষ্ণু উরুক্রম আমাদের শান্তি দান করুন। ব্রহ্মাকে নমস্কার। বায়ুকে নমস্কার কারণ তুমি প্রত্যক্ষ ব্রহ্মা।’ অমিত মেরুতারকা খোঁজে। চিকেন চিলির অর্ডার দেয়। লাবণ্যের একাকিত্বের শুরুটা আকাশ-ভরা জ্যোৎস্নায় জ্বলে। ঘরের জানালা দিয়ে বেলকনি ভিজিয়ে জ্যোৎস্নার জেলি লাবণ্যের শরীরে। জ্যোৎস্না, কী জ্যোৎস্না—তার আলো খয়েরি বৃন্তে থাকা ফুটফুটে স্তনে! গা জুড়ে, বুক ভরে, উড়ুক্কু মনের অনাবিল নন্দনে, দূর নক্ষত্রমালার মুখ থেকে ঘূর্ণায়মান হাওয়ায় নেমে আসা অম্বরে, উপচানো আলোর সুতীব্র জ্যা-য়, কুয়াশা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা তির্যক রেখায়, উপর্যুপরি স্পর্শে অনুচ্চ ও অনুরণিত হয়ে বলে, ‘লাবণ্য ভালোবাসি। শপথে বলছি ভালোবাসি।’ হাতপাতা রাত। অঞ্জলি-ভরা ফুটন্ত আলো পিঠ থেকে নিতম্ব ছুঁয়ে ঊরুর ওপর দিয়ে রেখার আল্পনা শেষে ঠোঁটে গিয়ে পৌঁছোয়।— লাবণ্য ভালোবাসি! জ্যোৎস্নার ক্রম বিস্তৃতি। উদগ্র উন্মত্ত অর্থে অফুরন্ত অমোঘ সত্যে কোমল আর নম্রতায় আষ্টে-পৃষ্ঠে। দীক্ষিত জ্যোৎস্না ঘূর্ণায়মান অতিবাহিত বায়ুমণ্ডল থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে রক্তমাংসে অস্থিমজ্জায় অনায়াসে; ক্রমাগত তা, শূন্য অবয়ব আর অভাবনীয় দেহসৌষ্ঠবে গঠন-পূর্ণতায় নেমে আসে। সুরে, লয়ে, ছন্দে, গম্ভীরায় মোহিত আলোর কণ্ঠ আর্দ্রতায় করে আর্তনাদ, লা—ব—ণ্য। জেগে উঠতে হয়, উচ্ছ্বাসপ্রবণ মন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আদি মানুষদের অবয়ব আর দেহসৌষ্ঠব পর্যবেক্ষণে রাখে, বাদ্যযন্ত্রগুলো আপনক্ষেত্রে ডুম-ডুমাডুম দ্রিমিক-দ্রিম বাজে; অবাক হয়; লক্ষ করে, সে ন্যুড, ছুরি-রশ্মি নাভিমূল থেকে এলোমেলো উঠতে থাকে, নেমে এলে তারপর ভিজে শীৎকারে ডোবে, বলে লা-ব-ণ্য; লাবণ্য বলে, না। সমর্পিত হয় মন, রক্ষাহীন লুব্ধতায় ভিজে একাকার হয়ে গেলে প্রত্যঙ্গের ভেতর থেকে খোলসগুলো বেরিয়ে আসে। রাত গভীর হয় আর্দ্রতা ততো বাড়তে থাকে। পৌষের রাতে হাওয়ায় কয়েকমুহূর্তে ঠাণ্ডার সূচসংযুক্তি আর শিশিরসিক্ততা বিরামহীন বিন্যস্ত করে আশপাশ। সামান্য সময়ের জন্যে বাস্তবতার কাছে ফিরে আসে। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছিলো: theinobenzodiazepine atypical antipsychotic. It has affinity for dopamine muscarinic and adrenergic. কয়েকটা ইঞ্জেকশন দিয়েছে ইন্টার মাসকুলারে। নীল শিরাটা সরে যায় বারবার, আস্তে-আস্তে শনাক্ত করে শিরায় পুশ করা। রাতের দ্বি-প্রহরে খোলা জানালা থেকে ধবধবে আকাশ, কাশফুলের মতো থোকা-থোকা, শেষ প্রাহ্নের প্রথম প্রহরে বকের পালকের মতো নির্ভার সকালের প্রতি পরিণত অনুভব। রেখায় জ্যোৎস্নার জেলি ভেজা ও স্নিগ্ধতায় স্থিতি সমর্পিত হলে সে বিশ্বাস করতে থাকে মানুষের সীমাবদ্ধতা আর অতিক্রম্যমনস্কতা দ্বান্দ্বিক এই টানাপড়েনে মানুষ সৃজনশীল! ভাসে লাবণ্য, জ্যোৎস্নার বহু অনুচর যখন তার শরীর ও মনের ভেতর অনুপ্রবেশে সুখী, শোনে, লা-ব-ণ্য। সে বলে, না। আদিম-মানুষদের বাদ্যযন্ত্রের উন্মত্ত সুর পরম যত্নে আধাচেতন অবস্থায় বারবার নিয়ে যেতে থাকে; ঘুম আর জাগরণের মাঝে মাত্র দুবার বলেছিলো ‘না-না;’ নঞর্থক এই শব্দদুটি পুনরায় আর ব্যবহার করার অবকাশ থাকে না বরং নব্য সাশ্রয় তার নির্জ্ঞান মনকে সুযোগ করে দেয় উন্মুক্ত আয়োজনে, কখনও-বা, এই গোটাকয়েক মানুষের সামনে নিজেকে সঁপে দিলে কোনো গ্লনি থাকে না সহনীয় অবসাদ উন্মোচনে। ভেতর থেকে মমতার বিন্দুটি মুহূর্তে ছড়িয়ে দেয়। আদিম-মানুষগুলো তৈলাক্ত জেলি হাতে নিয়ে শুরু করে নাভিমূল থেকে। একেকটা পরমাণু একেক জনের ওপর দায়িত্ব বর্তিয়েছে। মোটাতাজা লোকটা দলনেতা। দায়িত্ব ভাগ-ভাগ করে। বিচিত্র ভাষায় তাদের নিজেদের ভেতর আলাপ-আলোচনা। বোঝা না গেলেও মনে হয় তারা উত্তুঙ্গে, এমনকিছু করতে যাচ্ছে তাদের নিস্পৃহ অবয়বে গোপন উল্লাস! সাংঘাতিক রকমের নিয়মনিষ্ঠ ও কর্মে তৎপর। দলপতি নির্দেশ দিলে নানারকম আর নানারঙের জেলি দিয়ে মালিশ করছে লাবণ্যের সারা শরীর। গোপন ক্ষেত্রগুলো জ্যোৎস্নার মুখোমুখি রাখায় চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্নায় আর পৌষের তিন সপ্তাহের মাথার রাতের দ্বি-প্রহরে গুপ্ত অঙ্গগুলো প্রকটিত হয়ে উঠছে, কাঁপছে, ভিজছে—শীতের শিশির যেমন হাওয়ায় ভিজে। দলের রোগা একজন পায়ের আঙুলগুলোর ভেতর মালিশ করে তরল ভেষজ দিয়ে। একজন মাথায় চুলের গোড়া খোঁজে। এক চুল থেকে অন্য চুল সরানোর অদ্ভুত দক্ষতা অন্যদের কাছে মনোযোগ আকর্ষণে। প্রতি চুলের গোড়ায় যতোটুকু সম্ভব লোকটা হাতের পিন দিয়ে ফুটাচ্ছিলো। মুহূর্তগুলো কোনো গতি না পেয়ে বিভ্রমে। জনাকয়েক মাথার ওপরে শূন্য থেকে কী যেন টেনে নিচ্ছিলো পায়ের দিকে। বাদ্যযন্ত্রের বৈচিত্র্যের তালে-তালে কাজ করছিলো তারা।
‘তুমি তো অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট, দীর্ঘদিন বাইরে থাকলে, ডিগ্রিটা বাদে আমাদের জন্যে কী এনেছো? পাশের টেবিল থেকে একজন বলে, ‘তোমার গলার টাইটা সুন্দর, ওটা খুলে দাও।’ অমিত টাইটা খুলে দেয়, অন্যজন অমিতের কাছ থেকে বিদেশি সিগারেট নেয়। জ্যোৎস্নার আলো। মৃদু ঠাণ্ডা। আরও দুটো জিন নিলো। বিফ ইটার। মিষ্টি স্বাদ। স্লো নেয়। জার্ক-এ যেতে চায় না। পান-পরবর্তী কোনো কিক্ট তার পছন্দ না। আকাশে নক্ষত্রমালা শনাক্ত করে আপন প্রেক্ষিতে। কই শোভনলাল আর কেতকী, কেতকী আর সূত্রটা পারছে না। লাবণ্য প্রাচ্যে পূর্ণ।
অমিত জানে মিশতে, অনেকেই ঈর্ষাকাতর; নিবারণ চক্রবর্তীর কবিতাগুলো তার অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্ম; ফ্যাশনকে বিদ্রুপ করার নিম্ন-মধ্যবিত্ত গুণটা আরেকটা ফ্যাশনে রূপ নেয় কি-না ভাবছিলো; স্টাইল তার প্রিয়, ফ্যাশন না। ফ্যাশনকে অমিত মুখোশ ভাবে, স্টাইলকে মুখশ্রী। নিবারণ চক্রবর্তী আগুন জ্বালাতে বলে:
সে তো আমার কেউ নয়, কেউ নয়,
তবু বলে অন্ধকারে আগুন জ্বালা।
জ্বালাই আমি, নিভু-নিভু প্রদীপ জ্বলে।
চাঁদের আলো, পোড়ে তার চরণখানি
অন্তরে অভয়ার কাঁটারও শিরীষ।
শোভনলাল লিখলো:
অলুক্ষণা খুললো না, বুকের কথা বললো না
কামরসে সিক্ত হলো, সাধুর বুকে ছোরা দিলো
ঋতুর বসনে ভাসে রতির জিনিস
সেমো বলে চোখের পানি আগুনে ফেলিস।
অমিত স্মার্ট হলেও প্রকটিত না। শোভনলাল শান্ত, সংযত ও রহস্যময় মানুষের মতো কুণ্ঠাযুক্ত। জীবন থেকে কখনও কখনও শূন্যে যায়। শোভনলাল জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করে। অমিতের পাণ্ডিত্য আছে, বুদ্ধিজীবী সে, পেশাদার বুদ্ধিজীবী বলতে যা বোঝায় তা নয়। হেলায়- খেলায় কাটিছে বেলা— এরকম মনোভঙ্গিটুকু; সার্বক্ষণিক দায়িত্ববোধে কাতর না— জানে একুশ শতক কোক আর কমিক্স-এর। হেসে সিসিকে বলেছিলো, ‘মেয়েরা নির্লজ্জ হলে পুরুষের ভেতরে ব্যক্তিত্বটা হতো।’ সিসি বলেছিলো, ‘মেয়েরা কতোটা নির্লজ্জ হতে পারে জানো?’ ‘জানি’— অমিত বলেছিলো, ‘সেটা তো প্রকাশ্যে হতে হবে, প্রকাশ্যে উন্মুক্ত হলে পুরুষের ভেতরে শৈত্যপ্রবাহ তৈরি হতো। নৈতিক দিকটা বাড়তো।’ সিসির কড়া জবাব, ‘য়্যুরোপ আর কতোভাবে মেয়েকে খাবে, অমিত তুমি যা বলছো য়্যুরোপের শেখানো কথা, মেটরিয়াল ওয়ার্ল্ডে মেয়েকে সামনে এগিয়ে দেয়ার নামে পুরো খেয়ে ফেলেছে, এখন যা হবে পেছনে খাওয়ার পাঁয়তারা।’
তো বিষয়টা কেতকী না লাবণ্যের? কে করবে সেটা চিন্তা হতে পারে। বিফ ইটার নামতে নামতে নাড়িভুঁড়ির ভেতর দিয়ে চলতে থাকে: ওই যে নক্ষত্রমণ্ডল, বায়ু, শীতের শিশির, জ্যোৎস্না এই সবকিছুর ভেতর লাবণ্য: ‘লাবণ্যকে পছন্দ করি তাতে মিথ্যা নেই। জানি, প্রেম যেখানে পরিণত সেখানে পরিণতি ভিন্ন। কেতকী যদি আমার পরিণতি হয় আমি শূন্যে ভাসতে পারবো? কেতকী আকর্ষণীয় অধুনা শিষ্টাচারে। মাটি-কাদার সঙ্গে লাবণ্যের যুক্তি। কেতকীর সঙ্গে বহু সময় ওড়া যায়! লাবণ্য, চায় তাকে উড়িয়ে নিক। অমিত তা পারে না, অন্তত দু’হাত উপরে ওঠাতে। কী করবে? সে তো জুয়েল আইচ নয় যে ঘুম পাড়িয়ে শূন্যে উঠিয়ে রাখবে! সে তো অমিত—অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট। ইংরেজিটা জানে। বিখ্যাতদের ত্রুটি ধরায় দক্ষ। রবিঠাকুর পছন্দ করে! মানুষ কিসে খুশি? ভাবে, মানুষ তখনই খুশি যখন পরিপার্শ্ব তাকে নিয়ে অন্ধ, সুখ সেখানে, যখন কাউকে অন্ধভাবে দেখে, কর্তা বুঝতে পারে তার কর্ম, করণেও সেই থাকে, সম্প্রদানে স্বকৃত্য; অপাদান আর অধিকরণে সুবিন্দু আর আপন সীমারেখা। লাবণ্য একটি নাম যা আমার স্বপ্ন, আচ্ছন্ন করে। অর্জনের ভিত্তিমূল যার সামনে চুরমার, রবিঠাকুরের মতো বলতে পারি না, আমার চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ, চুনি উঠলো রাঙা…। লাবণ্য Ruby বা Star Ruby অথবা Pegion Blood Ruby— কে জানে? আমাকে আগ্রাসী করে তুলেছে!
দুটো জিন নেয়। জ্যোৎস্নায় লাবণ্যের আকণ্ঠ পানে নীলকণ্ঠ হওয়া, উদ্গীরণ নেই, অসীম নীরবতা।
যে লোকটা চুলের গোড়া খুঁজে হাতের আলপিন দিয়ে (কিম্বা সূচ জাতীয় কিছু) আধাচেতন করে রেখেছিলো, সে-ই আবার চুলগুলোর গোড়া নাড়ালে লাবণ্য মুহূর্তের জন্য জ্ঞান পায়, চারপাশ দ্যাখে, তারপর সেই একই নির্জ্ঞান মনে ঢোকা। দলপতির মুখটা খাড়া, হা-টা বড়ো যেন কামানের মুখ, ভেতর থেকে গোলা বেরিয়ে আসে। বক্ষদেশ দুর্গের প্রাচীর। বাদ্যযন্ত্রের তালে-তালে কেবল দুলছিলো না। সবাই অদ্ভুত এক নৃত্যের তালে দলপতির আদেশ মতো কাজগুলো করছে। দলপতি শূন্যের ওপর দুহাত দিয়ে গোল ফাঁসের মতো বারবার ঘোরালে দুইজন আঙুলের মালিশ দ্বিগুণ তালে করে। শরীরের নগ্নতাগুলো সূ²তায় স্পর্শিত হচ্ছে, এতো অনুরণন? জ্যোৎস্না এতো স্বাদু! দলের অধিকাংশ লোক ঘুরে-ঘুরে স্থানান্তরে এক ঘোরে এক সম্মোহনে তাকে ঘিরে নেচে চলেছে, কী উদাম! শব্দহীনতার শেষ বিন্দুতে ছুটে চলেছে। আধাচেতনভাবে জিভে ঠোঁট ভেজাতে তারা তাকে জল দিলো। তৃষ্ণার্ত হয়ে জল খেয়ে পরক্ষণে জ্ঞানহীন মৃতপ্রায় সে লুটিয়ে পড়ে। যতোই আধাচেতন ততোই ইন্দ্রিয়গুলো বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া! আকাক্সক্ষার চাপে হৃৎপিÐ বেরুতে চায়! হাত-পাগুলোকে নাড়াতেই একই অনুভব বারবার সুরেলা আর অনুচ্চ কণ্ঠে ডাকে লা-ব-ণ্য। লাবণ্য বলে, না। দক্ষতায় তারা শরীরটা মালিশ করছে। সফল হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উঠছে কেঁপে-কেঁপে। জগতের প্রতি ধিক্কারের জন্যই প্রতিরক্ষার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। দলপতি দুজন লোককে তার দুপাশে ডাকলে, কুচকুচে কালো চেহারা, শাদা দাঁত, বড়ো বড়ো চোখগুলো খোসাছোলা লিচুর মতো—এমন দুজন দলপতির কাছে এসে সাহায্য করতে থাকে। শূন্যে দু’হাত উঠিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দশ আঙুল হাতের মুদ্রায় ঝিলিমিলি মন্ত্রযুক্ত সেই আবহে। পরে দলপতি হাতদুটো তুলে সবাইকে আরেকটা নির্দেশ দিলে লোকগুলো আলাপ করতে থাকে। জ্যোৎস্না ফুঁড়ে আরও কিছু লোক এসে তাদের সাথে যোগ দিলে উজ্জ্বল তারাগুলো আপন আলোয় বিমোহিত। বন্যায় প্লাবিত। দলপতি বারবার তাকিয়ে দ্যাখে বড়ো বড়ো কালো চোখদুটোর দিকে আর ফোলা দুষ্টামিভরা ঠোঁটের দিকে অপলকে।
সূর্যের দক্ষিণদিক দিয়ে পৃথিবীর গতির সময় আকাশে নাক্ষত্রিক পটভ‚মিকায় প্রতিভাত হয় মঘা (Regulas), দক্ষিণায়নের নক্ষত্র, অসীম আকাশে এর আবির্ভাব জানায় অপসুর দক্ষিণে।
পুবের পৃথিবীর দিকে পা রেখে চোখদুটো বন্ধ করে রেখেছিলো লাবণ্য; অনেকক্ষণ। দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে অপূর্ব জ্যোৎস্না আর শীতল হাওয়া আসে, ব্যস্ততায় কম্পিত লাবণ্য বিছানা থেকে উঠে অচেতনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করে মুখে পাফ্ নেয়—অপূর্ব জ্যোৎস্না গলিত সোনা ছাড়া কী? কোটি চূর্ণিত সোনার মিহিদানা; হাওয়ায় জোয়ারের তাজা গন্ধ, সৌরভ; লাবণ্য তখনই ছোটে আত্মহীন আবেশে, তখনই শোনে অজস্র অনুরণন, লা-ব-ণ্য। লাবণ্য বলে, হ্যাঁ।
নিজের ঘরে ফিশ ফ্রাই নিয়ে বসেছে অমিত। বাইরের জ্যোৎস্না ভারি পর্দার কারণে অপ্রবেশ্য। একশো বছরের জঞ্জাল চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যেগুলো কারো চোখেই পড়েনি যেন-বা কেবল অমিত এখনই আবিষ্কার করেছে— চেহারায় ভাবটাও তেমন। যদিও তার মুখে এটার ছাপ একেবারে আসেনি বরং একধরনের প্রফুল্লতা রয়েছে। ভেতরে ভেতরে জাগছে, মাথার ঝিমঝিম ভাবটা প্রশস্তি আনে; ভালো লাগে অমিতের। প্রকৃতির প্রাখর্য এই ঘরে প্রবিষ্ট না হলেও জানে আজ সন্ধ্যা, রাত, মধ্যপ্রহর উছলিয়ে উঠেছে। অমিতের মনে এ-সবকিছুই যেন একছড়া মুক্তার হারের মতো; যেন করুণার মালা গলায় দিয়েছে দক্ষিণের ভূলোক। দরোজা দিয়ে শীতল হাওয়া। মাথাটা ঝিমঝিম করে স্নায়ুতন্ত্রীতে আস্তে-আস্তে এক ধরনের উন্মাদনা। মানুষের যাবতীয় কান্নাকে ডুবিয়ে দিয়েছে এই জ্যোৎস্না; এক নির্মম নির্জনতা চারপাশে ঘিরে ধরেছে অমিতের; বাইরে দুরন্ত জ্যোৎস্নালোকিত হাওয়ায় আজ নিজেকে সঁপে দেয়নি। রক্ষা করার মতো শক্তি তার আছে। বিশ্বাসী হতেই ভেজানো দরোজাটা হঠাৎ খুলে যায়। ঘরের আলোটা আস্তে-আস্তে হালকা হতে থাকে। সেইমুহূর্তে জমাট অন্ধকার ইতোপূর্বের আলোটুকুকে গ্রাস করে। পায়ের শব্দ। ওই দুর্বল আলোয় দেখার চেষ্টা করে। চার্জার উঁচু করার আগেই সামনে এসে দাঁড়ায় কেউ। বাইরে ক্রমবর্ধমান বাতাসের একনিষ্ঠ উচ্ছ¡াসে চারপাশ। যে এসে দাঁড়ায় সাড়া দেয় না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার পদশব্দ! নিজেদের বিষয় নিয়ে কেবল নিজেরাই প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা নেবে।
‘কে?’—অমিত বলে ওঠে।
‘লাবণ্য’— লাবণ্যের কণ্ঠস্বর ভেজা-ভেজা।
চার্জারের আলোটা অন্ধকারের মধ্য অংশটুকু শুধু কাটিয়ে দিয়েছে।
সারা পৃথিবীতে কোথাও কেউ নেই। সে আর লাবণ্য।
‘বসো’— অমিত বলে।
‘না’—।
‘বসো লাবণ্য।’
‘না— জীবনের এই মুহূর্তটা তাৎপর্যপূর্ণ। যতোদিন আমি বেঁচে থাকবো।’
‘এটাই শেষ?’
‘না—যতোদিন বেঁচে থাকবো মুহূর্তটা বারবার আসবে’— বলতে বলতে লাবণ্য অমিতের প্লেট থেকে কাঁটাচামচ তুলে নেয়। এর চার দাঁত— সাধারণ সত্য, প্রগতি, নিয়ন্ত্রণ, সৃষ্টি— জীবনকে টেনে গেঁথে গালে তোলা। নবগতি আর চলতি হাওয়ার মিশ্রণ। ‘বিশ্বাস করি মুহূর্তটা দুর্লভ’— লাবণ্য এগোয়।
‘কেন?’
‘জানি না।’ লাবণ্যের শান্ত স্বর।
হঠাৎ অমিত চমকে ওঠে। তার সজ্ঞা কী যেন বোঝে।
লাবণ্য কয়েক পা এগিয়ে আসতেই স্থবির অমিত আর্তনাদ করে ওঠে— লা-ব-ণ্য।
লাবণ্য ভেজাস্বরে গন্তব্যমুখী, বলে হ্যাঁ—আমি—।
কথাশিল্পী নাসরীন জাহানকে।