ফারহান ইশরাকের তিনটি কবিতা
১
সিয়েস্তা
ব্যবস্থাপিত ঘুমের স্পর্শে হিমার্ত অভিধান
সিয়েস্তার আহ্বানে ইস্ত্রিকৃত বিছানার ভাঁজ!
ঝিনুকের দ্বিবিধ কব্জা বুঁজে যেতে যেতে
মুগ্ধ রূপকে দেখা মানচিত্রে অবাক কবিতা,
শিশিরের দুধে ভেজা কয়েক মহাদেশ
মার্জিনের কান্না মুছে এক সুরে বদ্ধ ময়দান
পিষ্ঠের বক্রতা উবে গেছে একান্ত সুষমায়
বিষক্রিয়া থেকে জেগে ওঠা দ্বীপের মন্থরতা
অস্ত্রের চেয়ে অঙ্গীকারে একনিষ্ঠ সংঘসমূহ
বহুজাতিক রক্তপাতে ছাঁচ কাটা ভূখণ্ডাবলি
অস্ত্রোপচারের চিহ্নপাতগুলো যথাসাধ্য মুছে
বিশালতর সেলাইয়ের টানে নকশা হয়ে আছে
ক্রমক্রিয়াশীল এনেস্থেসিয়ার স্বভাবে সুস্থির
চিমটি কেটে দেখি অন্ধকারে কতটুকু ঘোরে
দেহের উদ্দীপনায় অস্তমিত পৃথিবী জেগেছে!
২
দুই নদীর মিলিত কব্জায়
একই কার্পেট দুই দিক থেকে দেখা, অর্থাৎ
উপদলীয় ইতিহাস
রক্ত শুকোতে শুকোতে ঘড়ি মেরামতে
অস্থিরতা, টানটান…
দুই পক্ষই বিপরীত পিষ্ঠকে উল্টোদিক
ভাবে
পাশ বদলের প্রস্তাবে আসুন; তৃতীয় পক্ষে
আছি এই আপাত সন্ধ্যায়
সুধীবৃন্দ, অভিভাষণের হাহাকারে
হয়তোবা উল্টে পড়ে যাবে
গুচ্ছ গুচ্ছ গোল টেবিল!
বিদ্যুতের সরল খাম্বায় প্রখর টিকাভাষ্য
মানুষের উজ্জ্বলতা দেখবে মেগাশহর
কী করে সম্ভব?
যতই টান টান করে বলি, খানিকটা
ঢলেই থাকবে গুণ টানা দড়ি,
হ্যাঁ, এটাই সম্ভবত উপমার জন্য দরকারি
স্মরণযোগ্য কোন কোন ঘটনার কথা
বলবো
অধ্যায় বিভক্ত হয়ে একটি আন্তরিক আতা
বলেছিল, পড়ো এই ফলোপন্যাস
স্বাদ ও বীজপত্রের চিৎকারসমেত
একটি সুখপাঠ্য কামরাঙ্গা এসে রসফলকের
পৃষ্ঠা খুলে দিয়েছিল
অতীত একটি তরঙ্গায়িত কাঁটাতার
বর্ণমালা শোভিত দারিদ্র্য তখনো একটি
স্কুল মাত্র
সারিবদ্ধ হাফপ্যান্ট এত ধূলি উড়াতো
রাস্তায়!
দুই নদীর মিলিত কব্জায় জং ধরা পানি
বইছিল কেবলই বায়োলজিক্যাল…
পেটানো লোহার ফুলকিতে
তখনো কাব্য লেখা হচ্ছে মফস্বলে
প্রথম মৃত্যুর দাঁতে একটি বিষফল
কতটুকু শান্তি দিয়েছিল
নক্ষত্র খচিত একটি কার্পেট দেখার লিপ্সায়
অনেক জ্যোৎস্না রাত বিফলে গিয়েছে
বীজতলা একটি কার্পেট, এবং ধানক্ষেত
এবং জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী উপদ্বীপ…
দ্বন্দ্বের কার্পেটে লাশ হয়ে শুয়ে থাকি
কার্পেটের দুই বুক মেলাতে পারে কেউ?
৩
কেস স্টাডি
রক্ত ঝরছে রাস্তায়, হাসপাতালহীন
গভীর অসুখে আন্তরিক রোগী
এ এক জীবনবিদারী চিত্রপাত
আছি এক চিকন নদীর পাড়
ঘেঁষে
মহাকাশের আয়না ঝকঝক
গ্রন্থবদ্ধ করে রাখি আশ্চর্য ব্লিডিং
বস্তুনিষ্ঠ এই রক্তপাত
চাটলো কিনা কোনো জিভ
মর্মাহত মানুষ অথবা যে-কেউ
পশু কিংবা পবিত্র কুকুর
জরুরি নয় জরুরি নয় জানা
কবিতা এমন, অনিবার্য এই
প্লাটিলেট
রঞ্জকের স্বাদে মুগ্ধ মুষ্ঠিমেয় মাছি
তাদেরও কোথায় বাড়ি,
পরাহত সেই অভিজ্ঞান
লালা চিহ্নে বোঝা যাবে বিষপান
এই মহাগ্রন্থের নাম।