জেসমিন মুন্নী
আমার হাতে ছিলো মার্কেজের ‘লাভ ইন দ্যা টাইম অব কলেরা।’ ভাবছিলাম, ভালোবাসা চিরকালই ভালোবাসা, যে কোনো সময়ে আর যে কোন স্থানে, কিন্তু এটা আরও অনেক পোক্ত যখন মৃত্যু নিকটবর্তী। হ্যাঁ! মৃত্যু আমার নিকটবর্তী ছিলো। নয়তো মৃত্যুই ছিলাম। সবকিছু ধ্বংসের পর উঠে ছিলাম নাকি অতীতের গুহায় ছিলাম। আমার কিছুটা মনে আছে। গাড়ি থেকে নেমে ফেরিতে উঠা পর্যন্ত সমস্তকিছু স্পষ্ট। নাকি সবকিছু আমার মাথার ভিতরকার বিভ্রান্তি।
আমি কল্পনা করছি নয়তো ¯^প্ন দেখছি আমার ভিতরে আমি, আমার চোখের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আছি, আওয়াজ শুনছি, কণ্ঠ¯^র শুনছি সব। না বইয়ের কোন চরিত্র বা ঘটনা না, আমার ফিরে আসার গল্প। ইতালির এ্যায়ারপোর্ট, সবার উৎভ্রান্তের মতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দৌড়ানোর দৃশ্য। অদৃশ্য কোন দানব যেন সবাইকে তাড়া করছে। মনে হচ্ছিল এতদিন পর দানবটি তার শিকার খুঁজে পেয়ে হামলা চালাচ্ছিলো এবং সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাঁকিয়ে না বসা পর্যন্ত ¯^স্তি পাচ্ছিল না। এও মনে পড়ে প্লেনে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পাবার আকাক্সখায় উৎগ্রীব দৃষ্টিগুলো বড় বেশি অসহায় দেখাচ্ছিল। প্লেন ল্যান্ড করার পর টুকরো টুকরো কিছু দৃশ্য। দীর্ঘ জার্নির পর মানুষদের অধৈর্য হয়ে উঠা। পরিবার পরিজনের শহরে পদার্পণের পর অতর্কিত ধাক্কা, অসতর্কিত মানুষজন, গাড়ির হর্ন তবুও মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি।
আমাকে নিতে আসা প্রাডোগাড়িটা সূর্যের আলোয় চকচক করলেও তার ভেতরে প্রিয়মুখগুলো না দেখতে পেয়ে অবাক হবার দৃশ্য। ড্রাইভারের অস্পষ্ট কিছু কথায় বিচলিত ছিলাম। ড্রাইভারের মুখে পরিবারের উদবিগ্নতা ও এফএমরেডিওতে প্রচারিত সতর্কবাণী পুনপুন শুনেছিলাম।
বেশি চমকছিলো গন্তব্য অতিক্রম করে গাড়ির আচমকা টার্ন! ঘটনাটি কী আমার বিভ্রান্তি নাকি এ্যাংজাইটি ছিলো, ব্যপারটা নিয়েও বেশ চিন্তিত ছিলাম। নাহ! সত্যিই আমার গাড়ি গন্তব্যকে অতিক্রম করেছিল। আমি ড্রাইভারকে কারণ জিজ্ঞেস করলে, বড় ম্যাডামের হুকুমে আমরা বাগানবাড়িতে যাইতেছি।’
অতিরিক্ত ধাক্কাটা কী তখন অনুভব করেছিলাম? বড় ম্যাডাম শুনতেই মায়ের গম্ভীর মুখটা ভেসে উঠল। মনে পড়ল বাবার মৃত্যুর পর তার আপত্য ¯েœহ। অনুমান করলাম গাড়িটা অতি পরিচিত ঢাকা শহর অতিক্রম করে সামনের দিকে অগ্রসর। শহরটাকে মনে হচ্ছিল অভিশপ্ত মানুষের বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ। কয়েকটি পরিচিত পাখির কলকাকলি ছাড়া একটা কুকুরের পদচারণাও কোথায় ছিল না। শুনশান রাস্তা কেটে আমাদের গাড়ি আগাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সূর্য সরে গেলে নেমে আসবে অদ্ভূত দেখতে সব মৃত্যু মানুষের দল।
আমাকে আইসোলেশনে পাঠানর দৃশ্য স্পষ্ট। বর্তমান অবস্থান থেকে ইচ্ছে থাকা সত্বেও পিছনে ফিরে যেতে পারছিলাম না। যা আমার জন্য অনিবার্য তা অবশ্যই আমাকে শেষ করতে হবে। এমন কি যদি অপরিহার্যভাবে, যা শেষ করবো তা শুরুর দিকে মোড় নাও নেয় তবুও।
স্ত্রী অথবা সন্তানের কথা মনে পড়ছিল? মার কথা! তাদের কল করেছিলাম কিনা, ফোন দেখে মনে পড়ল। কল লিস্টে সবার নাম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। সবই আমার স্মৃতিতে স্পষ্ট। মনকে ডাইভার্ট করার জন্য ফেরিতে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ক্যাপচার করে বিস্ময়াভিভূত হচ্ছিলাম। এবং তারপর প্রচন্ড এক কম্পণ। একঝটকায় পানিতে ভারি কিছু পড়ার বিকট শব্দ। মনে আছে তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল হয়তো,ব্যাস এই পর্যন্ত।
তারপর অস্পষ্ট বিচ্ছন্ন সব ঘটনাগুলো যেন ¯^প্ন অথবা কল্পনার মিশেল। অতীত ও বর্তমানের ভিতরকার পার্থক্য ও সাদৃশ্য। অকস্মাৎ ঘুমে ধস নামলে শিউরে উঠে কোন এক সভ্যতায় নির্মিত গৃহে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। ঘরময় আদিম কোন বুনো ফুলের গন্ধ।
সেই রাতটিতে কোন একটা সভ্যতায় গড়ে ওঠা শয়নকক্ষ, ঘরের জানালাগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তুলা দিয়ে তৈরি কাপড়ের পর্দা আর ফাঁকফোকর বিভিন্ন চিত্রকর্ম দিয়ে আটকানো ছিলো। পোড়া ইটের দেয়ালে ঝুলে ছিলো পৌরানিক কিছু দেব- দেবীর চিত্র। ঘরের কোণে একটি টেবিলে খোদাই করা বিভিন্ন আকৃতির মাটির পাত্রে কিছু অসুধ ও পানীয়। ঘরটিতে কিছু শব্দ যা ভনভন করছিল ঠিক আমার কানের কাছে, ফিসফিস করছে, মনে হচ্ছিল পূর্বপুরুষদের মতো আমি সেই মৃত্যুদের দলে ভিড়ে গেছি। কিরামান ও কাতিবিন ফেরেশতারা পৌছে গেছে আমার কাছে। ফিসফিস করে তারা কথা জুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু মরণের পড়ে তো সব শেষ। জীবীতদের সঙ্গে তো তারা কথা বলে না বুঝতে পেরে উঠে বসি। ততক্ষণে দুর্বিসহ রাতের অবসান হয়েছিল।
সকালে আদ্যোপান্ত ফুলের অলঙ্কারে আচ্ছন্ন অসম্ভব সুন্দরী এক নারীর সেবা শুশ্রæষার কথা মনে পড়লো। নারী কি ডাক্তার ছিল। অলৌকিক কিছু? ¯^র্গীয় দেবী? নাকি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল! আমি কী কোন হসপিটালে এডমিটেড! আমার নিরুপায়ত্বা ছাড়া কিছুই মনে পড়ছিল না।
শক্ত-পোক্ত নারী ঘরে প্রবেশের সঙ্গে উৎকট ভ্যাপসা ভাবটা কেটে যেত। তার কোমল হাতের স্পর্শে একটা মায়াবী ঘোর লাগত। কিন্তু সন্ধ্যা হলে প্রচন্ড জ্বরে কুঁকড়ে যেতাম। কাঁশিতে মনে হতো গলা ফেটে রক্তে ভেসে যাবে। গলার ব্যথায় মুখের লালার ¯্রােত ঠোঁটের কোণ গড়িয়ে বেরিয়ে পড়ত। যন্ত্রণায় বিছানায় গড়াগড়ি দিতাম। শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়তাম। আমার চরম অবস্থায় কোন দিছু অনুভব করার শক্তি নেই তখন নারীর বলিষ্ট ভূমিকা আমার মনকে আশা- জাগানিয়ার ¯^প্ন দেখাত।
সংক্রমণ খুব দ্রুতই আমার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। কোন প্রতিরোধের শক্তি আমার ছিলোনা। আমার শরীরটা মনে হত কেউ হাতুড়ি দিয়ে অনবরত পিটিয়ে যাচ্ছে। হাতুরি পেটার শব্দে কানে হাত চেপে বিছানায় পড়ে থাকতাম। মনে হত মৃত্যু আমাকে এতটুকু দয়া দেখাবে না। ঠিক সেই মুহুুর্তে ¯^র্গীয় দেবদূতের মতো নারী একটা মাটির পাত্রে তার মহাষৌধী নিয়ে আসত। একটা নরম ন্যাকড়া পাত্রে রাখা মহাষৌধী দিয়ে সমস্ত শরীর আলতোভাবে মুছিয়ে দিতো। তারপর মাটির পাত্রে আনা স্যুপ অতি যতেœ চামচ কেটে মুখে তুলে খাইয়ে নারী তার শুভ্্র আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিত।
সুন্দরী নারীর চেহারা আমার ঠিকই মনে ছিলো। সে কী দেখতে অনেকটা ফারমিনা ডাজার মতো! আমার স্মৃতিতে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল সব কিছু। সে কী আমার প্রাক্তন প্রেমিকা! নাহ! তাকে প্রথম দেখেছিলাম সুইডেনে নাকি নরওয়েতে! মনে পড়ে তাকে দেখেছিলাম জলবায়ু সংক্রান্ত কোনো সম্মেলনে? হ্যাঁ মনে আছে, নারীর সঙ্গে পরিচয় পর্বটা শুরু হয়েছিলো প্লাকার্ড হাতে সুইডেনের একটি স্কুলের সামনে। বরফের মতো ধবধবে সাদা গালের পেশীগুলো টানটান। পৃথিবী সম্পর্কে হুসিয়ারি সংকেতটা কী তার কন্ঠে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল!
তার আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টি এখনও মনে আছে। আমি তার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলাম। নারী আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। তার চেহারাটা মলিন দেখাচ্ছিল।
নারীর আনমনে গল্প বলে যাচ্ছিল। আমি অবাক বিষ্ময়ে নারী কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করছিলাম। সে বলছিল, কিছু মানুষ বলে, আমরা সবাই মিলে নাকি পৃথিবীতে সংকট তৈরি করছি। কিন্তু সেটি সত্যি নয়। যদি কোনো একজন অপরাধী হয়, তার জন্য সবাইকে দায়ী করা উচিত নয়। যারা অপরাধী, তাদেরকেই দায়ী করতে হবে। আর পৃথিবীর সংকটের পেছনে দায়ী হলো কিছু মানুষ..তারা পৃথিবীর কী ভীষণ ক্ষতি করে চলেছেন।.. বলতে বলতে নারী হাপাতে থাকে। তার কোমল বুকের ভেতরটা থর থর করে কাপছিল যার স্পন্দন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। পৃথিবীর জন্য কষ্টে তার কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিল। আমি তাকে সান্তনা দিলাম। মনে আছে কেবলি প্রলাপ বকছিলাম, কেঁদো না প্লিজ। আমার স্যুটকেসে নতুন এক পৃথিবী আছে। তুমি ইচ্ছে করলে নিয়ে নিতে পার।’
পরের দিন কাছে কোথাও মুরগির কুক্কুরু শব্দে সকাল হবার অলৌকিক দৃশ্য অপূর্ব ছিলো। বিচিত্রসব পাখির কলকাকলি, নদীতে ঢেউ ভাঙ্গার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। গৃহস্থালী প্রাণীদের পরিচিত ধ্বনি মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমি তখনও ঁেবচে ছিলাম। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, সুপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, আগুনে পোড়ানো ইটের বাড়িঘর, অদূরে পাথরের মন্দির তার সামনে ছোট একটা স্কুলের মতো ঘরে কয়েকটি ছোটবাচ্চাদের পড়াচ্ছিল গতরাতের সেই নারী। ..হাউ ডেয়ার ইউ, বলে পৃথিবী কাঁপিয়েছিল। আজ তার পরণে ছিল কার্পাস সুতোর চাঁদর। দেহের শোভাবর্ধন করছিল সোনার দুল, রূপার বালা, শক্সখ ও মূল্যবান পাথরের গলায় হার।
সুবিন্যস্ত ভাবে ছাত্ররা বসে ছিলো। নারী একটি নিজ¯^ চিত্রলিপি ও লিখন প্রণালীর মাধ্যমে তাদের পাঠদান করছিল। মনে আছে নারী বলছিল, ওরা আমাদের সন্তান,ওদের মাধ্যমে গড়ে উঠবে প্রকৃতিবান্ধব নতুন এক সভ্যতা,’ এই কথাগুলো। আমি ভাবছিলাম, সুন্দরী নারী কী তাহলে সয়ম্প্রভা ধরিত্রী আর আমি আদি পিতা মনু!
চারপাশের উঁচু উঁচু পাহাড়, সবুজ অরন্য, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঝে প্রশস্ত রাস্তা ধরে যতদূর এগোচ্ছি ততই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ বাড়তে থাকে। পথে বুনো গাছপালার ফাঁকে ফুটে আছে হরেক রকমের বুনোফুল, তার উপরে উড়ে বেড়াচ্ছে বাহারি প্রজাতির প্রজাপ্রতি।
আমার হাত ধরে হাঁটছে আর বলছিল, বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার অন্যতম সদস্য ছিলাম আমরা। অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় আমাদের সভ্যতা ছিল বেশি অগ্রসর ও উন্নত।
আমি তখন ভাবছিলাম অন্য কথা, সুন্দরী নারীর কী নাম দেয়া যায়। অদিতি নাকি পৃথিবী! কী নাম ধরে সম্মোধন করবো।
দূরে মেঘ রোদ্রের খেলা মনে হচ্ছিল আমাদের এই পথ চলাতেই আনন্দ। একটু পরে মৃদু বাতাস বইতে শুরু করল। তীব্র হয়ে উঠলো নারীর ঘ্রাণ। গজিয়ে ওঠা সবুজ বুনো ফুলের মাঝে আমি হঠাৎ বসে পড়লাম। শরীরে গতরাতের ক্লান্তির ছায়া। আমাকে বসতে দেখে নারীও বসল। নারীর ঘ্রাণ সঙ্গে বুনো ফুলের গন্ধে আমি ঘাসের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। শুনতে পাচ্ছিলাম মৃদুমন্দ বাতাসের কম্পন। আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন ভারী হয়ে ওঠেছিল মনে আছে। নিজের অবস্থান নিয়ে উৎকন্ঠিত ভাবটা শরীরের মনে ছড়িয়ে পড়ছিল। নারী সব বুঝে বিষন্ন ম্লান চিত্তে,অত্যন্ত করুণ দৃষ্টিতে আমার চোখে চোখ রাখে। তার বলা গল্পের শেষ করবার আকুলতা টের পেয়ে তাকিয়ে ছিলাম শেষটা শোনার অপেক্ষায়।
‘শুনবে না!’ নারীর মিষ্টি সুরে বলল।
অবশ্যই, বল।
নারী তার হাত আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিল। সবুজ ঘাসের উপর মাথা রেখে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়েছিল, সবকিছু কী আশ্চর্য নিস্তদ্ধ, শান্ত আর বিশুদ্ধ। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায়। আহ! তুমি, নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।’
গতরাতে প্রচন্ড জ্বরে মৃত্যু সম্পর্কে এক অদ্ভুত, দুর্লভ অনুভূতি আমার কাছে সম্পূর্ন নতুন এটা মনে আছে। এও মনে আছে পুণরায় বেঁচে উঠার অনুপ্রেরণা। প্রতিদিন রাতেই আমার মৃত্যু হচ্ছিল আবার সকালে নতুন জীবন পাচ্ছিলাম।
নারী বলছিল, নৃতাত্বিকরা ধারণা করবে পৃথিবী তারও লক্ষ লক্ষ বছর পরে, আবারও সব সভ্যতার মিলিত প্রয়াশে যে সভ্যতার উম্মেষ ঘটবে মানুষ নিজেই তাকে ধ্বংস করবে।
ঠিক সেই সময় আমার কী কিছু মনে পড়েছিলো? আমি কী এই সভ্যতার পতন সম্পর্কে গবেষণা করেছিলাম। আমি কী মাদ্রিদে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে কপ টুয়েন্টি ফাইভে যোগ দিয়েছিলাম! নারী যখন সভ্যতার পতন নিয়ে চিন্তায় মগ্ন ওর চোখে চোখ পড়তেই চোখের সব আলো জ্বলে উঠল।
এখন নারীর সুন্দর কুচকাঁনো চুলে মুখের একপাশ ঢেকে গেছে, টিকালো নাকের চূঁড়ায় ডেউয়ের মতো আচড়ে পড়ছিল চুল, খোলা বাহুতে শোভা পাচ্ছে হাতির দাঁতের মাদুলি। দমকা বাতাসে চুল উদাম হয়ে যায় নারীর প্রশস্ত পাণ্ডুর গাল। চওড়া কপালটা বলে দেয় সভ্যতার আভিজাত্য। তাতে উম্মোচিত হয় ওর শাদাটে কচি সরল চেহারা। একদম যেন মেঘমুক্ত চাঁদের মতো। আমি ইচ্ছে করলে হাতে হাত রাখতে পারি। নারীর সুন্দর মরাল গ্রীবাতে ঠোঁট ছোঁয়াতে পারি। নারীকে দেখতে মনে হচ্ছিল ছবির মতো, যেন কোন চিত্রকরের প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা ককেশীয় মেয়েমানুষ!
কিন্তু রক্ত মাংসের মানুষকে কামুক হতে হয়। যদ্দুর মনে পড়ে সভ্যতা মানুষ জাতিকে এটাই শিখিয়েছিল। সবুজ গাছের বিছানা থেকে উঠে নারীর গা ঘেষে বসলাম। কামাবেগে থরথর করে কাপছিলাম দেখে সুন্দরী আমার হাত চেপে ধরেছিলো। নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে আমার স্পর্ধা বেড়ে গেল। মনেমনে বলেছিলাম, আমাকে জোড়ে জড়িয়ে ধরো, আরো জোড়ে, আমাকে বুঝতে দাও আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ আমি পৃথিবীতে বিভিন্ন সভ্যতার পতনের ইতিহাস না জানলেও কামাবেগে পুরুষজাতির পতনের হয়েছিল এটা নিশ্চিত।
আসলেই কী আমি নারীকে জড়িয়ে ধরেছিলাম! মনে নেই। এখন এই মুহুর্তে সুন্দরী নারীর প্রেমে ডুবে যাচ্ছিলাম একেবারে গহন গভীরে। তখন আমার সাধ হয়েছিল নারীর গালে একটা পবিত্র প্রেম চুম্বন এঁেক দিতে। আবার পরক্ষণে মনে হয়েছিল, আমার এই যে দেহগত প্রেম, এমন কি কামনাবিধুর একটা চুম্বনের আঘাতও নারী অনুভব করতে পারবে না। এতোই ভঙ্গুর ও বায়বীয় আমি।